প্রকাশিত: Thu, Jan 4, 2024 10:41 PM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 12:50 PM

[১]শেখ হাসিনার বিজয় হবে বাইডেনের পরাজয়: ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল নিবন্ধ [২]বাইডেনের গণতন্ত্র উন্নয়নের সীমাবদ্ধতাগুলো ধরিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ

সালেহ্ বিপ্লব: [৩] ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের কলামিস্ট সদানন্দ ধূম তার এই অভিমতে লিখেছেন, আগামী রোববার জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশের ভোটাররা, যে নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত। নির্বাচন বয়কটের জন্য একটি বিরোধী দলকে ধন্যবাদ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো ১৭ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম প্রধান জাতিটির নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনার বিজয় হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য একটি পরাজয়, তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার সমস্ত মনোযোগ দিয়েছিলেন। 

[৪] কলামে বলা হয়, ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে বিশে^র বর্তমান ক্ষমতাসীন নারীনেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন, তিনি কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। তিনি ইসলামী মৌলবাদ কমিয়ে এনেছেন, সামরিক বাহিনীর ওপর সিভিল প্রশাসনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং চরম দারিদ্র থেকে দেশকে বের করে এনেছেন। অনেক উন্নয়নশীল দেশের নেতারা এমন সাফল্যের দাবিদার হতে পারেননি। শেখ হাসিনার ভ্রুক্ষেপহীন মনোভাব সংসদীয় গণতন্ত্রের চেয়ে সিংহাসনের লড়াইর সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। যারা তার কর্তৃত্ব মানতে অস্বীকার করবে, তারা আইনী হয়রানি, এমনকি সন্ত্রাসেরও শিকার হতে পারেন। 

[৫] ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরোাধিতার অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউস শেখ হাসিনার সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধী দলকে গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে ভয় দেখানোর অভিযোগ শাস্তি দিতে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার এসবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিরোধী দল বা সিভিল সোসাইটিকে কোনো সুযোগ দিতেই অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। 

[৬] নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দল বিএনপির ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। এই পদক্ষেপকে পাশবিক শক্তি প্রয়োগ হিসেবে অভিহিত করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অবিনাশ পালিওয়াল। তিনি লন্ডন’স স্কুল অব অরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজে কর্মরত। এক ফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আভাসই পাওয়া যাচ্ছে না। 

[৭] নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে মার্কিন পলিসির ব্যর্থতা এ কারণে লক্ষ্যণীয় যে, বাংলাদেশ বরাবরই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পরীক্ষাগার। এক্ষেত্রে বিশে^র অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গণতান্ত্রিক উত্তরণের চেয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। 

[৮] যদিও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একদলীয় শাসনের পথে অগ্রসর হয়েছে, অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় দেশটিতে গণতন্ত্রের শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। ১৯৪৭ পর্যন্ত ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ার অংশ থাকায় দেশটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ও মুক্ত গণমাধ্যমের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচনের সঙ্গে পরিচিত। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী পশ্চিমা বিশে^ শিক্ষালাভ করেছেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশটিতে বিএনপি ছিলো একটি শক্তিশালী বিরোধী দল, যারা ক্ষমতার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখতো। 

[৯] এছাড়াও দেশটির অর্থনীতি রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানির পরিমাণ ছিলো ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা ওয়াশিংটনকে একটি সুবিধাজনক অবস্থান দিয়েছে। 

[১০] কিন্তু হোয়াইট হাউস এই সুবিধা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে খুব বেশি পরীক্ষামূলক কিংবা অধিক আত্মবিশ^াসী ছিলো যে, এর মাধ্যমে তারা শেখ হাসিনার আচরণকে পাল্টাতে পারবেন। জো বাইডেন পর পর দুটি গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাননি, যেখানে গণতন্ত্রের দিক দিয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা অনেক দেশকেও ডাকা হয়েছিলো। 

[১১] ২০২১ সালে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত গত বছর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। একই সময়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। 

[১২] হোয়াইট হাউসের জানার কথা, কর্কশ শব্দ এবং আধাআধি পদক্ষেপ বাংলাদেশকে খুব কমই প্রভাবিত করবে। আওয়ামী লীগকে নৃশংস হিসেবে উল্লেখ করে এই লেখায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মার্কিন চাপ সামাল দিয়েছেন। আর এটা তিনি করেছেন রাশিয়া, চীন ও ভারতের সঙ্গে কোয়ালিশন গঠন করে, যেটাকে তিনি নিয়েছেন অস্থির দেশকে স্থিতিশীল করার কৌশল হিসেবে। 

[১৩] বাংলাদেশকে আরো উদারনৈতিক অবস্থানে ঠেলে দেওয়ার যে কোনো উদ্যোগ ভারতকে এই দৃশ্যপটে তুলে আনবে। এর পরিবর্তে বাইডেন প্রশাসন ভারতের জনমত গঠনকারীদের একটি বড়ো অংশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে, যারা বাংলাদেশে মার্কিন চাপকে বিপদজনক মনে করেন। একই সঙ্গে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে চীনের প্রভাব কমাতে দিল্লির সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। 

[১৪] ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে, শেখ হাসিনার যতোই দোষ থাক না কেনো, তার বিকল্প হবে আরো খারাপ। সর্বশেষ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় নিশ্চুপ ছিলো। ভারতের বিরুদ্ধে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছিলো। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর গভীর সখ্য, ইসলামপন্থী যে দলটি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের ওপর অবর্ণনীয় নৃশংসতা পরিচালনা করেছে। ভারতীয়রা বিএনপিকে আরেকবার ক্ষমতায় আসতে দিতে ইচ্ছুক নয়। 

[১৫] বাংলাদেশে উদার গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে ভারতকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার দিকে আঙ্গুল তুলেছে। এসবের মধ্যদিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, জটিল বিশ^ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে সফলভাবে উন্নত করার চেয়ে গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলা অনেক সহজ।